ভারতের নাগরিক ড. জাকির নায়কের অনুসারী পিস টিভি ও বাংলাদেশের পিস স্কুলগুলোয় শিক্ষার্থীদের ‘উগ্র সালাফি মতবাদে’র চর্চায় দীক্ষিত করার অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশে এই চর্চা শুরু হয় মুফতি কাজী ইব্রাহিমের হাত ধরে। ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনার পর হামলাকারী জঙ্গিদের কেউ-কেউ জাকির নায়েকের অনুসরণকারী থাকায় তৎপর হয়ে উঠেছেন গোয়েন্দারা। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশে পিস টিভি ও পিস স্কুলের অন্যতম উদ্যোক্তা কাজী ইব্রাহিমের গোয়েন্দা নজরদারি শুরু হয়েছে। এদিকে, এ বছরের শুরুর দিকে পিস স্কুলের সিলেবাস যাচাইয়ে নির্দেশ দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত এই কার্যক্রম থমকে আছে। এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটিও আজ পর্যন্ত কোনও তথ্য দিতে পারেনি। আর ওই কমিটিতে কারা-কারা সদস্য ছিলেন, এ তথ্যও গোপন রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইসলামি চিন্তাবিদরা জানান, সালাফি মতবাদের অন্তত ৮ টি গ্রুপ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে উগ্রবাদ; যারা সিরিয়াকেন্দ্রিক কার্যক্রম শুরু করে কয়েক বছর আগে। ভারতের নাগরিক ড. জাকির নায়েককে ওই মতবাদের অনুসারী মনে করা হয়। ধারণা করা হয়, আইএসও উগ্র সালাফি মতবাদের অনুসারী। বাংলাদেশে গ্রেফতারকৃত মাওলানা জসিম উদ্দীন রাহমানীও ওই চিন্তাধারা ছিলেন বলে জানা যায়।
আলেমদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ড. জাকির নায়েকের অনুসারীদের মতে, ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর মোনাজাত করা যাবে না। ইসলামের টাই পরা জায়েজ। শবে বরাত পালন করা হারাম। তারাবির নামাজ সাধারণ ২০ রাকাত পড়া হলেও তারা ৮ রাকাত মনে করেন। পীর-মাশায়েখদের মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ হারাম ইত্যাদি।
আলেমদের অভিযোগ, ড. জাকির নায়েক ও তার অনুসারীরা এই বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে। এক্ষেত্রে পিস টিভিকে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচারের অনুমতি নেওয়া হলেও মূলত এটি প্রচার হয় দুবাই থেকে।
ইসলামী ছাত্র মজলিসের সাবেক সভাপতি ও ইসলামী চিন্তাধারার লেখক মাওলানা রুহুল আমীন সাদী জানান, দারুল উলুম দেওবন্দসহ বাংলাদেশের আলেমরাও ড. জাকির নায়েকের এসব চিন্তাধারার বিরোধী।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও ইসলামী চিন্তাবিদ ড. আহমদ আবদুল কাদের মনে করেন, পিস টিভি বা জাকির নায়েক প্রসঙ্গে অন্তত কয়েকটি প্রসঙ্গ কাজ করছে। রাজনৈতিক দিকটি হচ্ছে, জাকির নায়েক ভারতে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তার কয়েক বছর আগের দেওয়া বক্তব্যের একটি অংশকে কেন্দ্র করে এখন যে আলোচনা হচ্ছে, সেটি দুর্ভাগ্যজনক। তার ওই বক্তব্যের ভাষাটি সঠিক ছিল না। বিজেপি একটি হিন্দু সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল। ইতোমধ্যে হিন্দুদের মূর্তিপূজা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, যে তাদের ধর্মগ্রন্থেই এই পূজার কথা নেই। অনেক হিন্দু নেতাই তার সঙ্গে বিতর্কে হেরেছেন। ফলে, গুলশান হামলায় অংশগ্রহণকারীর একটি স্ট্যাটাসের সূত্রে তা ধরা গেল। বিজেপি এই সুযোগ নষ্ট করতে চাইছে না।
আহমদ আবদুল কাদের দ্বিতীয় কারণটি সম্পর্কে বলেন, জাকির নায়েক তো কোরআন ও হাদিসের আলোকেই বলেন। তো, এটা তো অপরাধ না। অজ্ঞতার কারণে অনেকে বলেন হয়তো। এখন অনেক মাসায়ালার ক্ষেত্রে হয়তো হানাফি মাজহাবের সঙ্গে মেলে না। এ কারণে কেউ কেউ তার বিরোধিতা করেন। তৃতীয় দিকটি হচ্ছে, ইনটেলেকচুয়াল এনিমিরা তাকে পছন্দ করছেন না। তার জনপ্রিয়তা তাকে সারাপৃথিবীতে পরিচিত করেছে। ব্যস। এটুকুই। মুসলিমদের মধ্যেও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন অনেক।
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব ও লালবাগ জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়ার সিনিয়র শিক্ষক মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, আমি জানি, তারা সালাফি মতবাদের অনুসারী। তারা সালাফি মতবাদ প্রচার করেন।
ফয়জুল্লাহ জানান, ড. জাকির নায়েক ও তার অনুসারীরা চার ইমামের মাজহাব মানেন না। এমনকী জেএমবি, জসিম উদ্দীন রাহমানী, ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শায়খ আবদুর রহমান, বাংলা ভাই; তারা সালাফি মতবাদের অনুসারী ছিলেন।
জানা গেছে, পিস টিভিতে কওমি মাদ্রাসার কয়েকজন আলেমকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ করে দিলেও এটি পিস কর্তৃপক্ষের কৌশল। নিজেদের লিবারেল প্রমাণ করতে রাজধানীর খ্যাতনামা কয়েকটি মাদ্রাসার আলেমকে নিয়মিত আমন্ত্রণ জানাত দুবাইভিত্তিক এই চ্যানেলটি।
পাঠকের মতামত: